মৌসুমী বায়ুর সাথে জেট বায়ুর সম্পর্ক আলোচনা করো। অথবা, মৌসুমী বায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
মৌসুমী বায়ুর সাথে জেট বায়ুর সম্পর্ক
মৌসুমী বায়ুর সাথে জেট বায়ুর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ।এজন্যই ভারতের মৌসুমী জলবায়ুর ওপর ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু এবং উপক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ুর প্রভাব সীমাহীন ।
ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু :- ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু জুন মাসে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই সময় এই বায়ু স্রোত চীনের দক্ষিণ উপকূল থেকে আরম্ভ করে থাইল্যান্ড ও ভারতীয় উপদেশ পেরিয়ে আফ্রিকার পূর্ব দিকে সুদান হয়ে প্রায় সাহারায় গিয়ে শেষ হয়। পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে পশ্চিমে ভারত পর্যন্ত ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ুর গতিবেগ খুব বেশি (ঘন্টায় ১০০ থেকে ২০০ কিমি) থাকে এবং পশ্চিমে তা ক্রমশ হ্রাস পায়।
মৌসুমী বায়ুর উপর প্রভাব:-
ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সঠিক সময় আগমন ও সক্রিয়তা বহুলাংশে ক্রান্তীয় পূবালী জেটের অবস্থানের উপর নির্ভর করে। যদি এই ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বেশি উত্তরে সরে যায় তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহে ছেদ ঘটে।অর্থাৎ ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে বৃষ্টিহীন খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।এছাড়া বর্ষাকালে ভারতের ওপর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি এবং সেগুলোর তীব্রতার হ্রাস বৃদ্ধি এই ক্রান্তীয় পূবালী জেটের গতি প্রকৃতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু :- উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ফিরে যাবার সময় থেকেই ভারতের উপর আবির্ভূত হয় এবং প্রায় মে মাস পর্যন্ত এই দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়।
মৌসুমী বায়ুর উপর প্রভাব:-
জেট বায়ু শীতকালে যতই দক্ষিণে সরে আসে ভারতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা তথা শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে।ফেব্রুয়ারি মাসে এটি সর্বাধিক দক্ষিনে আসে এবং তারপর ধীরে ধীরে উত্তরে সরে গিয়ে মে মাসে অন্তর্হিত হয়। শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই বায়ুস্রোত হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। একটি শাখা হিমালয়ের উত্তর এবং অপরটি দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে আরো পূর্বে গিয়ে মিলিত হয়। হিমালয়ের দক্ষিণের শাখাটি যত শক্তিশালী হয় ততই উত্তর ভারতের শীত তীব্র হয় এবং শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে ভারতে মৌসুমী বায়ু স্থায়িত্ব ও তীব্রতা বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি এই জেট বায়ুর অবস্থান ও গতি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন