মহাকাশ গবেষণায় ভারত নতুন এক ইতিহাস গড়ল।
সফল হয়েছে ভারতের প্রথম সৌর অভিযান। সফল ভাবে ভারতের প্রথম সৌরযান আদিত্য-এল ১-কে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-এর প্রথম সূর্য মিশন-আদিত্য L1 ৬ই জানুয়ারি ২০২৪ শনিবার ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে প্রবেশ করেছে।চন্দ্রযানের সাফল্য নিশ্চিত হতেই সৌরযান নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় প্রথম মিশন যা সূর্য নিয়ে গবেষণা করবে ।
সূর্যের কাছাকাছি স্যাটেলাইট পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই জল্পনা চলছিল । ২০২০ সালে এই মিশন শুরুর কথা থাকলেও করোনা অতিমারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়। ২০২৩-এর ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১.৫০ নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে লঞ্চ করা হয় আদিত্য L1 সৌরযানটিকে।তারপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে সৌরযানটি পাক খাচ্ছিল তার চারপাশেই। পৃথিবীর কাছে মোট পাঁচটি কক্ষপথ বদলের পর অবশেষে সেটি বেরিয়ে যায়। চার মাসের দীর্ঘ যাত্রাও ছিল মসৃণ । সূর্যের নানা ধরনের ছবিও তুলে পাঠিয়েছে যাত্রাপথে।গন্তব্যে পৌঁছতে আদিত্য এল১-এর সময় লেগেছে মোট ১২৫ দিন।
ইসরোর সৌরযানটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে সান-আর্থ সিস্টেমের ল্যাগ্রঞ্জ পয়েন্ট (L1) এর চারপাশে একটি হ্যালো কক্ষপথে পৌঁছেছে। L1 বিন্দু পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে মোট দূরত্বের প্রায় এক শতাংশ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন L1 - এ পৌঁছানোর পর মহাকাশযানটি কোনও গ্রহন ছাড়াই সূর্যকে দেখতে পাবে। আগামী প্রায় পাঁচ বছর মহাকাশ থেকে সূর্য সম্পর্ক নানা তথ্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের পাঠাবে এই আদিত্য এল১।
আদিত্য এল১ স্যাটেলাইটে থাকা মোট সাতটি যন্ত্রের সাহায্যে পাঁচ বছর ধরে সূর্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে পরীক্ষা চালাবে ইসরো। এই স্যাটেলাইটের মূল পেলোডটি তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স। তাছাড়া আরও ছ'টি পেলোড ভারতেরই অন্যান্য সংস্থা তৈরি করেছে।
মহাকাশযানটির নামকরণ হয়েছে হিন্দু দেবতা সূর্যের নামানুসারে। সূর্যের আর এক নাম আদিত্য। জ্বালানি-সহ প্রায় এই কৃত্রিম উপগ্রহের ওজন ১৫০০ কিলোগ্রাম।সরকারি সূত্রে জানা গেছে মিশনটির খরচ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ।
কি কাজ করবে আদিত্য L 1?
• এই মিশনটি সাতটি পেলোড দিয়ে তৈরি। এই সাতটি পেলোড বিভিন্ন তরঙ্গ ব্যান্ডে আলোকমণ্ডল (ফটোস্ফিয়ার), ক্রোমোস্ফিয়ার (সূর্যের দৃশ্যমান পৃষ্ঠের ঠিক উপরে) এবং সূর্যের বাইরের স্তর (করোনা) নিয়ে গবেষণা করবে।
• ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা কীভাবে উত্তপ্ত হয়, তা নিয়ে গবেষণা করা হবে এই মিশনে। সেইসঙ্গে আংশিকভাবে আয়োনাইজড প্লাজমার পিছনে কী বিজ্ঞান লুকিয়ে আছে, তা নিয়েও গবেষণা চালানো হবে এই মিশনে।
• সৌর বিস্ফোরণ বিষয়েও খতিয়ে দেখবে আদিত্য এল১ ।
• পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা নজর রাখছেন মহাকাশে প্রয়োজনীয় জ্বালানি খরচ কমাতে কোনও পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় কিনা। এই অভিযান সফল হলে সৌরমণ্ডল এবং পৃথিবীর পরিবেশের উপর সূর্যের ঠিক কী প্রভাব পড়ে সেই সম্পর্কিত বহু অজানান তথ্য সামনে আসবে।
• বাইরের দিকের তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি কেলভিন। নিম্নস্তরের তাপমাত্রা সেই তুলনায় কম, প্রায় ৬০০০ কেলভিন। সূর্যের পৃষ্ঠদেশ ও করোনার তাপমাত্রার তফাতের কারণ নিয়ে গবেষণা করবে আদিত্য এল ১।
•করোনা থেকে ছিটকে আসা আগুনের ফুলকি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কীভাবে প্রভাব ফেলে তা আদিত্য-এল১ খুঁজে বের করবে।
•
সূর্যের করোনার তাপমাত্রা গড়ে ১০ লক্ষ বা তার কিছু বেশি ডিগ্রি সেলসিয়াস। সব সময় একরকমের থাকে না এই তাপমাত্রা । কখনও কমে কখনও বাড়ে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে আদিত্য- এল১।
সাতটি পেলোড ও তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা নিচে উল্লেখ করা হল -
SUIT - বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ফোটোস্ফিয়ার এবং ক্রোমোস্ফিয়ারের চিত্র প্রদান করবে ।
ASPEX - প্রোটন, আলফা কণা এবং ভারী আয়নের মত সৌর বায়ুকণার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করবে ।
ARPA - সূর্য থেকে এক্সরে পরিমাপ করবে।
PAPA - মহাকাশযানের চারপাশে প্লাজমা পরিবেশ পরিমাপ করবে।
SOLEXS - সূর্যের করোনা থেকে এক্স রে নির্গমন পরিমাপ করবে।
HEL1OS - সূর্য থেকে উচ্চ শক্তির এক্সরে নির্গমন পরিমাপ করবে।
VELC - করোনার চিত্র দেবে এবং স্পেকট্রোস্কোপির মাধ্যমে এর গতিবিদ্যা অধ্যায়ন করবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন