সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে?/ রাশি বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য /রাশি বিজ্ঞানের গুরুত্ব/ রাশি তথ্য কি?/ রাশি তথ্যের প্রকারভেদ (What is statistics?/ features of statistics/ importance or function of statistics /what is statistical data? /types of data)

রাশিবিজ্ঞান কাকে বলে? /রাশি বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ/ রাশি বিজ্ঞানের গুরুত্ব:-



ইংরেজি statistics শব্দের বাংলা রূপ হল পরিসংখ্যানবিদ্যা বা রাশিবিজ্ঞান। Statistics শব্দটি  ল্যাটিন শব্দ 'status' এবং  ইতালীয় শব্দ 'Statista' থেকে এসেছে। 

বর্তমানে পরিসংখ্যান শব্দটি দুটি পৃথক অর্থে ব্যবহৃত হয় -
সংখ্যাগত তথ্য সমূহের সমাহার ( A collection of numerical data) 

তথ্য ব্যবহারের কৌশল ( A method of dealing with data) 

সেই কারণেই বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ, এবং পরিসংখ্যানবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিসংখ্যানকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। 

R. A. Fisher এর মতে পরিসংখ্যান হল প্রয়োগিক বা ফলিত গণিতের একটি শাখা যা পর্যবেক্ষণ লব্ধ তথ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। 

Croxton and cowden  এর মতে পরিসংখ্যান হল সংখ্যা তথ্যের সংগ্রহ উপস্থাপন এবং ব্যাখ্যা করার বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা। 

রাশিবিজ্ঞানী Seligman এর মতে রাশি বিজ্ঞান হলো একটি বিজ্ঞান যার সাহায্যে সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি ,শ্রেণীবিন্যাস ,উপস্থাপন ,তুলনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে উদ্দেশ্যে সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 

বিভিন্ন রাশিবিজ্ঞানী র সংজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় বিজ্ঞানের যে প্রক্রিয়ার দ্বারা সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, শ্রেণীবিন্যাস, উপস্থাপন, তুলনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় বা বিশ্লেষণধর্মী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী সংখ্যাগত তথ্য সুশৃংখলভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় তাকে রাশিবিজ্ঞান বা পরিসংখ্যানবিদ্যা (Statistics) বলে। 

পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য ( characteristics of statistics) 

১) পরিসংখ্যানকে সমষ্টির তথ্য হতে হয় ।কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা সম্পর্কহীন তথ্য রাশিবিজ্ঞানে বিবেচনা করা হয় না। 

২)রাশি তথ্য কে একাধিক কারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে হয় । একটি বিশেষ কারণের দ্বারা প্রভাবিত তথ্য ও রাশিবিজ্ঞানে বিবেচনা করা হয় না। 

৩)রাশি তথ্যকে অতি অবশ্যই সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশিত হতে হয়।সংখ্যায় প্রকাশ করা সম্ভব না হলে সেটি রাশিবিজ্ঞানে বিবেচনা করা হয় না। 

৪) রাশি বিজ্ঞানকে নির্ভুল হাওয়া কাম্য ।এর জন্য প্রয়োজন তথ্য সংগ্রহ সঠিক পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয় পরিমাপের যথাযথ একক। 

৫) রাশিবিজ্ঞানে বিবেচিত হওয়ার জন্য রাশি তথ্য কে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হয়। 

পরিসংখ্যানের গুরুত্ব , ব্যবহার ও কার্যাবলী (importance of statistics) 

বর্তমানে রাশিবিজ্ঞান রাজনৈতিক ,সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গেই নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। অর্থনীতি, জীববিজ্ঞান পদার্থবিদ্যা ,রসায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, দর্শন বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশি বিজ্ঞানের প্রয়োগ ব্যাপক। এছাড়া ও চিকিৎসাশাস্ত্র ,ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণাক্ষেত্র এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ ঘটছে ।

১)পরিসংখ্যান বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক  ঘটনাকে সুনির্দিষ্ট রূপে উপস্থাপন করে ।

২)পরিসংখ্যান হলো সেই কৌশল যা বিভিন্ন আর্থসামাজিক বিষয়ের মধ্যেকার তুলনামূলক আলোচনার পথকে সুগম করে। 

৩)অসংখ্য জটিল এবং বিস্তৃত তথ্য সহজ ভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে রাশিবিজ্ঞান। 

৪)রাশিবিজ্ঞান যে কোন বিষয় সম্পর্কে মতামত গঠন এবং সেই মতামত প্রমাণ বিষয়ে সাহায্য করে। 

৫) বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের সাহায্যকারী উপাদান হিসেবে ও কাজ করে রাশিবিজ্ঞান। 

৬)কোন এলাকার উন্নয়নমূলক নীতি নির্ধারণে পরিসংখ্যান সাহায্য করে। 

৭)পরিসংখ্যান তথ্যের শ্রেণীবদ্ধকরণে সাহায্য করে। শ্রেণিবদ্ধকরনের  ফলে বিভিন্ন তথ্যের মধ্যেকার তুলনা ও ব্যাখ্যা সহজ হয়। 

পরিসংখ্যানে সীমাবদ্ধতা ( limitation of statistics) 

রাশিবিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা বিষয়কে সাহায্য করলেও সমস্ত বিষয়ে বা সমস্ত ধরনের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা যায় না।সেই জন্যই রাশিবিজ্ঞান বর্তমানে জনপ্রিয় বিষয় হলেও এর কিছু ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা যায়। সেগুলি হল-

১)রাশিবিজ্ঞানে একটি বস্তু বা একজন ব্যক্তি বা একটি ঘটনার বিষয়বস্তু আলোচনা করা সম্ভব হয় না। 
রাশিবিজ্ঞান কেবলমাত্র সমষ্টির বিষয়ে আলোচনা করে।

২)রাশিবিজ্ঞান গুণগত তথ্য যেমন সততা ,সৌন্দর্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। এটি মূলত পরিমাণগত রাশি তথ্য পর্যালোচনা করতে পারে । 

৩) পরিসংখ্যানের অধিকাংশ ক্ষেত্রে নমুনা নির্বাচনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। নমুনা নির্বাচনে ভ্রান্তি ও পক্ষপাতিত্ব থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন ভুল হয়ে যায়। 

৪)যেকোনো তথ্য যেকোনো পরিসংখ্যান কৌশলে ব্যবহার করা যায় না এর জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন। 

৫)রাশি বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত মূলত গড় মানের উপর প্রতিষ্ঠিত ।এই কারণে রাশিবিজ্ঞানে যে মান নির্ধারণ করা হয় সেটি সম্পূর্ণ সঠিক না হয়ে প্রায় সঠিক হয়ে থাকে। 


রাশি তথ্য কি?/ রাশি তথ্যের প্রকারভেদ :-



অনুসন্ধান কাজের জন্য সংগ্রহ করা তথ্য কে বলা হয় রাশি তথ্য বা সংখ্যা তথ্য। রাশিবিজ্ঞান বা পরিসংখ্যানের মূল উপাদানই হলো এই তথ্য বা data ।গবেষক বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে গবেষণা ক্ষেত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন।এই তথ্য ছাড়া সামাজিক অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক যে কোন গবেষণা বা পরিমাপ করাই অসম্ভব। 
এই তথ্যের কতগুলি গুন বা বৈশিষ্ট্য হল-

১)তথ্য সাধারনত সংখ্যায় প্রকাশ করা হয় । 
২) তথ্যসমূহ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। 
৩) তথ্যসমূহ সংগ্রহের নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে ।
৪) তথ্য পরিমাপযোগ্য বা অপরিমাপযোগ্য দুই হতে পারে। 

 তথ্যের শ্রেণীবিভাগ classification of data

তথ্যের প্রকৃতি অনুযায়ী 

গুণগত  তথ্য (Qualitative data) 
সংখ্যাগত  তথ্য (Quantitative data) 

তথ্য সংগ্রহের উৎস অনুযায়ী

প্রাথমিক তথ্য (Primary data) 
গৌণ তথ্য (Secondary data) 

তথ্য বিভাজন অনুযায়ী

শ্রেণীবদ্ধ তথ্য (Grouped data ) 
অশ্রেণীবদ্ধ তথ্য (Ungrouped data) 

Qualitative data - যে সমস্ত তথ্য কোন গাণিতিক সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায় না তাকে বলা হয় গুণগত তথ্য ।যেমন জাতি ,ধর্ম ,ভাষা, সততা ইত্যাদি। 

Quantitative data - যে সমস্ত তথ্য সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায় অর্থাৎ পরিমাপ যোগ্য তাকে বলে পরিমাণগত তথ্য।যেমন - উচ্চতা, ওজন ,মজুরি, বয়স ইত্যাদি। 

Primary data  - কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সরাসরি ভাবে অনুসন্ধান ক্ষেত্র থেকে যদি রাশি তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাহলে সংগ্রহ করা রাশি তথ্য কে বলা হয় প্রাথমিক রাশিতথ্য । 

 Secondary data - যখন কোন তথ্য অনুসন্ধান ক্ষেত্র থেকে সরাসরি সংগ্রহ না করে অন্য কোন প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত উৎস থেকে  সংগ্রহ করা হয় তখন তাকে  গৌণ তথ্য বলে। 

Grouped data - অনুসন্ধানক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা রাশিতথ্য কে  যখন কতকগুলি ভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে প্রকাশ করা হয় ,তখন তাকে শ্রেণীবদ্ধ তথ্য বলে।

Ungrouped data - অনুসন্ধান ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত রাশি তথ্যের মানগুলিকে যখন কোন শ্রেণী ব্যবধানের মধ্যে না রেখে অবিন্যস্ত অবস্থায় একক সংখ্যা ও তাদের পরিসংখ্যা রুপে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে অশ্রেণীবদ্ধ  তথ্য বলে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দশম শ্রেণী ভূগোল ম্যাপ পয়েন্টিং মাধ্যমিক Class 10 Geography map pointing

  Click the picture Click the picture   Click the picture Click the picture Click the picture Click the picture Click the picture Click the picture

চাহিদা (Demand) – অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 100টি MCQ প্রশ্নোত্তর | Economics Notes in Bengali

  চাহিদা (Demand) – 50টি গুরুত্বপূর্ণ MCQ 1 . চাহিদা বলতে কী বোঝায়? a) আকাঙ্ক্ষা b) ক্রয়ক্ষম আকাঙ্ক্ষা c) উৎপাদন d) সরবরাহ ✔ উত্তর: b) ক্রয়ক্ষম আকাঙ্ক্ষা 2. চাহিদার তিনটি উপাদান হলো— a) প্রয়োজন + অর্থ + ইচ্ছা b) প্রয়োজন + উৎপাদন + সরবরাহ c) প্রয়োজন + আয় + শ্রম d) শ্রম + পুঁজি + ভূমি ✔ উত্তর: a) প্রয়োজন + অর্থ + ইচ্ছা 3. চাহিদার আইন কে প্রবর্তন করেন? a) অ্যাডাম স্মিথ b) আলফ্রেড মার্শাল c) কেইনস d) পিগু ✔ উত্তর: b) আলফ্রেড মার্শাল 4. চাহিদার আইনের মূল কথা কী? a) দাম বাড়লে চাহিদা বাড়ে b) দাম বাড়লে চাহিদা কমে c) দাম কমলে চাহিদা কমে d) আয় বাড়লে চাহিদা কমে ✔ উত্তর: b) দাম বাড়লে চাহিদা কমে 5. চাহিদা বক্ররেখা সাধারণত কেমন হয়? a) ঊর্ধ্বমুখী b) নিম্নমুখী c) সমান্তরাল d) উল্লম্ব ✔ উত্তর: b) নিম্নমুখী 6. চাহিদার আইনের কার্যকারিতা কোন শর্তে বজায় থাকে না? a) আয়ের স্তর অপরিবর্তিত থাকলে b) ভোক্তার রুচি অপরিবর্তিত থাকলে c) দাম অপরিবর্তিত থাকলে d) ভোক্তার আয় ক্রমাগত বাড়লে ✔ উত্তর: d) ভোক্তার আয় ক্রমাগত বাড়লে 7. চাহিদা বক্ররেখা আঁকতে X অক্ষের উপর থাকে— a) দাম b) চাহিদার পরিমাণ c)...

প্রশ্নমালা(Questionnaire) কি? প্রশ্নমালার প্রকারভেদ/প্রশ্নমালার সুবিধা ও অসুবিধা

What is questionnaire?/ প্রশ্নমালা কি?  ভূগোলের গবেষণা বা বিষয় অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তথ্য সংগ্রহের একটি অন্যতম পদ্ধতি হল প্রশ্নমালা পদ্ধতি বা questionnaire method.  এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত ও সুসজ্জিত কিছু প্রশ্ন লিখিত আকারে উত্তরদাতার কাছে রাখে এবং উত্তরদাতা সেটি পূরণ করে সাক্ষাৎ গ্রহণকারীকে দেয় । Characteristics of questionnaire (প্রশ্নমালার বৈশিষ্ট্য ) :- একটি আদর্শ প্রশ্নমালার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যেতে পারে ।সেগুলি হল - প্রশ্নের ভাষা সহজ এবং সরল হতে হবে।  প্রশ্নের ভাষা সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট হওয়া দরকার।  সব ধরনের মানুষ বুঝতে পারবে এমন প্রশ্ন করা উচিত।  প্রশ্নগুলি যেন উত্তর দাতার পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হয় সেদিকে লক্ষ্য দিতে হবে।  উত্তরদাতার আত্মমর্যাদা কে সম্মান দিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করা উচিত।  দীর্ঘ গননা দরকার এমন প্রশ্ন এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।  যেসব প্রশ্নের একাধিক উত্তর বা অসম্পূর্ণ উত্তর হয় সেসব প্রশ্ন এড়িয়ে চলা উচিত।    Step...